
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করার পর জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিয়ানমারে বেসামরিক সরকার এবং প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) মুখপাত্র মিও নয়েন্ট জানান, গতকাল সোমবার ভোরে রাজধানী নেপিডোতে অভিযান চালিয়ে তাদের শীর্ষ নেতাদের আটক করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টার পর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে এক বছরের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয় বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়। টেলিভিশনে ওই ঘোষণায় বলা হয়, গত নির্বাচনে ‘জালিয়াতির’ ঘটনায় সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের হাতে। বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সেনা সদস্যরা প্রাদেশিক সরকারের প্রধানদের বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের আটক করছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এনএলডির মুখপাত্র নয়েন্ট রয়টার্সকে বলেছেন, যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সু চি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্ট এবং অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা আছেন। নিজেও গ্রেপ্তার হতে পারেন- এমন ধারণা করছেন জানিয়ে নয়েন্ট বলেন, আমি আমাদের জনগণকে বলতে চাই, চটজলদি প্রতিক্রিয়া জানাবেন না এবং চাই তারা আইন অনুযায়ী কাজ করুক। গতকাল সোমবার থেকেই নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোররাতের দিক থেকেই রাজধানীতে ফোন লাইনগুলোতে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নেপিডোর পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সব ব্যাংক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে দেশটির ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তিনি ‘উত্তর দেননি’ বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ফের হুমকিতে গণতন্ত্র: ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর আগ পর্যন্ত অর্ধশতক মিয়নমার সেনাবাহিনীর শাসনেই ছিল। সে সময় দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয় সু চিকে। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অহিংস লড়াইয়ের জন্য ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। এরপর তার দল এনএলডি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এলে ২০১০ সালে মুক্তি পান সু চি।
২০১২ সালের উপনির্বাচনে ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়ী হয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় সু চির দল। এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। সেই সরকারের মেয়াদ শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি বড় জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন। কিন্তু সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে।
দেশটির নির্বাচন কমিশন অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করলেও উত্তেজনা বাড়তে থাকায় মিয়ানমারে ফের সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেদক জনাথান হেড বলেন, মিয়ানমারের সেনবাহিনী এক দশক আগে যে সংবিধান রচনা করেছিল, সোমবারের সামরিক হস্তক্ষেপ সেই সংবিধানেরই সুস্পষ্ট লংঘন। অথচ গত শনিবারও সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের কথা বলেছিল।
মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিভেন দুজারিক। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সব পক্ষকেই উসকানিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার এবং গণতান্ত্রিক রীতি মেনে নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেছেন ভোটের ফল নিয়ে কোনো বিরোধ থাকলে আইনিভাবেই তা মেটাতে হবে।
গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য মিয়ানমারের জনগণের যে আকাক্সক্ষা, জাতিসংঘ তার প্রতি সমর্থন দিয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার যে কোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করবে বাইডেন প্রশাসন। সু চিসহ আটক নেতাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি মিয়ানমারের জনগণের যে আকাক্সক্ষা, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। সামরিক বাহিনীর উচিত এখনি তাদের ওই পদক্ষেপ থেকে সরে আসা।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিজ পেইনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, আইনি প্রক্রিয়ায় বিরোধ মীমাংসা এবং বেসামরিক সব নেতা ও অন্য যাদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে, তাদের সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া বিষয়টিকে মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে মিয়ানমারের প্রধান মিত্র চীনের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও আসেনি।
অন্যদিকে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনগণকে বিক্ষোভে নামার আহ্বান জানিয়েছেন সু চি। দেশটির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সোমবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশের জনগণের সামরিক অভ্যুত্থান মেনে নেয়া উচিত নয় এবং এর বিরুদ্ধে অবশ্যই বিক্ষোভ করা উচিত। খবর রয়টার্সের। দেশের সেনাবাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার ফলে দেশে আবারও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালু হবে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনএলডি। সু চির নাম নিয়েই এসব বিবৃতি দেয়া হলেও সেখানে তার স্বাক্ষর ছিল না। সু চির পক্ষ থেকে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই সামরিক অভ্যুত্থান মেনে না নিতে আমি লোকজনকে আহ্বান জানাচ্ছি। আন্তরিকভাবে সবাই এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’
এনএলডির চেয়ারম্যান উইন হেইন একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তার হাতে লেখা ওই বিবৃতিকে নির্ভরযোগ্য এবং এটি সু চির ইচ্ছার প্রতিফলন বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। উইন হেইন বলেন, আমার জীবনের দিব্যি দিয়ে বলছি এটা অং সান সুচির নির্ভরযোগ্য বিবৃতি, যা তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, মিয়ানমারে সব ধরনের আর্থিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংক। সোমবার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি এবং ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ার পরই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মিয়ানমার ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটসেবা ব্যাহত হওয়ায় দেশটির সব ব্যাংক তাদের সব ধরনের আর্থিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব ব্যাংকের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়ে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নেয়া হবে এবং কবে থেকে সব কার্যক্রম আবারও শুরু হবে সে বিষয়টি পরে জানিয়ে দেয়া হবে।
নজর এখন সেনাপ্রধানের দিকে: মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর হাতে। তাই দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং আলোচনার কেন্দ্রে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জনবিচ্ছিন্ন। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সামান্যই জানতে পারে বাইরের মানুষ। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে নিয়ে বিশ্লেষণমূলক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। ১৯৬২ সালে অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় ৫০ বছর ধরে মিয়ানমারে সরাসরি সেনা শাসন চলেছে। দেশটিতে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকে। মিয়ানমারের ২০০৮ সালের সংবিধানে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা সুরক্ষিত করা হয়েছে। দেশটির পার্লামেন্টে সেনাবাহিনী কোটায় ২৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে সেনাবাহিনীর। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির সরকারের সঙ্গে এভাবেই ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে অং সান সু চিসহ এনএলডির বেশির ভাগ সদস্য জান্তা সরকারের বিরোধিতা করায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের উত্থান যেভাবে
ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আইনে পড়াশোনা করেছেন জেনারেল মিন অং হ্লাইং। সে সময় থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় মিন। ২০১৬ সালে রয়টার্স মিনের এক সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলে। ওই সহপাঠী জানিয়েছিলেন, মিন স্বল্পভাষী ছিলেন। তিনি একটু আড়ালেই থাকতেন।
মিন সেনাবাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে (ডিএসএ) যোগ দিতে আবেদন করেন। তৃতীয়বারের চেষ্টায় ১৯৭৪ সালে তিনি সফল হন। ডিএসএ ক্লাসে মিনের এক সহপাঠী ২০১৬ সালে রয়টার্সকে বলেন, মিন গড়পড়তা শিক্ষার্থী ছিলেন। মিনকে মাঝারি র্যাঙ্ক থেকে এত ওপরে উঠতে দেখে বিস্মিত হয়েছেন বলে জানান তাঁর ওই সহপাঠী।
২০১১ সালে মিয়ানমারে গণতন্ত্র শুরুর সময় থেকে মিন সেনাবাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব নেন। ইয়াঙ্গুনের কূটনীতিকরা বলছেন, ২০১৬ সালে সু চি প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সময় থেকে মিন পেছনের সারিতে থাকা সেনাসদস্য থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ সময় থেকে মিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের কর্মকাণ্ড প্রচার শুরু করেন। মিন বিভিন্ন পরিদর্শনে যান। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। তাঁর প্রোফাইলের কয়েক হাজার ফলোয়ারও হয়। ২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর হামলার আগ পর্যন্ত এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মিন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকেরা রয়টার্সকে বলেছেন, লিবিয়া ও মধ্যপূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোয় ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর নৈরাজ্য পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মিন।
কমান্ডার ইন চিফ সব সময়ই পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ ২৫ শতাংশ আসন ধরে রাখতে চেয়েছেন। সু চিকে প্রেসিডেন্ট হতে বাধা দেয়- সংবিধানের এমন ধারার বদলও চাননি। গত ৮ নভেম্বরে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। সু চির জয় নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। এসব সমালোচনা ও অভিযোগ তুলেছেন মিনও। ২০১৬ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে আরও পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন মিন। সেনাবাহিনীর নিয়মিত রদবদলের অংশ হিসেবে সে সময় তাঁর পদত্যাগ করার কথা। পদত্যাগ না করে মেয়াদ বাড়ানোয় বিস্মিত হন পর্যবেক্ষকেরা।
২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মিয়ানমার ছেড়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের তদন্ত দল বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে।
জাতিসংঘ ২০১৯ সালে মিন অং হ্লাইং ও আরও তিনজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসসহ আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আদালতের কার্যক্রম এখনো চলছে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে ঠেকানো যায়নি মিনকে।
গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ৮৩ শতাংশ আসনে জয়ী হয়। এই জয় মেনে নেয়নি সেনাবাহিনী। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করবে- এমন গুঞ্জন চলছিল।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং কিছুদিন আগে এক বক্তব্যে মিয়ানমারের সংবিধান বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেন। এরপরই উত্তেজনা চরমে ওঠে। গত সপ্তাহে ইয়াঙ্গুনের বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তায়, রাজধানী নেপিডো ও অন্যান্য এলাকায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক মোতায়েন করা হয়।
শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ সোমবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনী। এর কিছু পরেই এক বছরের জন্য দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়াওয়ারদি টিভিতে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের আইনব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হলো। এ ছাড়া দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল মিন্ত সুয়ে।
কী ঘটবে সামনে: সেনাবাহিনী মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। আগামী এক বছর ক্ষমতায় থাকার ঘোষণাও দিয়ে ফেলেছে সেনাবাহিনী। মিন্ত সুয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল। তিনি ইয়াঙ্গুন সেনা কমান্ড পরিচালনা করেছেন। তিনি এখন মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনিই মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়াওয়ারদি টিভিতে মিন্ত সুয়ে স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি পাঠ করা হয়। তাতে মিন্ত সুয়ে বলেছেন, মিয়ানমারের আইনব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা মিন অং হালিংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হলো। মিয়ানমারে আবার সেনাশাসন ফিরে এল।
সংবিধান কি এমনই থাকবে?
২০০৮ সালে মিয়ানমারের সংবিধানে দেশটির সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী রাজনৈতিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে স্বরাষ্ট্র, সীমান্ত ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের পার্লামেন্টে নির্ধারিত আসনের এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির সেনাবাহিনী। তাই যেকোনো পরিবর্তনের জন্য সামরিক আইনপ্রণেতাদের সমর্থন প্রয়োজন। ইয়াঙ্গুনভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক খিন জ উইন বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধানকে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই সু চি ও তাঁর সরকার সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে খুব সামান্যই সফলতা এসেছে।
শেষ মেয়াদে সু চির নেতৃত্বে বাধা আসে এমন একটি নিয়ম নিষ্ক্রীয় করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সো মিন্ত অং বলেন, আইনের এমন ফাঁকফোকরের কথা সেনাবাহিনী আগে ভাবেনি। সেনাবাহিনী মনে করছে এতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ কমেছে।
সু চির পরিচয়: মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক হিসেবে খ্যাত জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সু চি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার আগমুহূর্তে তাঁকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ১৫ বছর বন্দি ছিলেন সু চি। গৃহবন্দি থাকাকালে ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান সু চি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। সন্তানরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সে সময় সংবিধানের নিয়ম অনুসারে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সু চি। রাখাইনে সেনা নির্যাতনে মিয়ানমার ছেড়ে ২০১৭ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। রোহিঙ্গা ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় নীরব থাকায় আন্তর্জাতিক মহলে সু চি সমালোচিত হন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি