
ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে। রাজধানীতে সম্প্রতি ছিনতাই ও ‘টানা’ পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এইক সাথে বাড়ছে অপ্রীতিকর ঘটনাও। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে মাঝে মাঝে কিছু শিশুকে গ্রেপ্তার করা হলেও অপরাধ রোধ করা যাচ্ছে না। বন্ধ করা যাচ্ছে না ড্যান্ডি সেবন, বন্ধ হচ্ছে না ছিনতাই ও টানা পার্টির দৌরাত্ন্য। তবে সম্প্রতি গোয়েন্দারা এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করে নানা অপরাধের নেপথ্যের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, আঠা জাতীয় নেশা ‘ড্যান্ডি’তে জড়িয়ে পড়া শিশু ও উঠতি তরুণরাই বেশি অপরাধে জড়াচ্ছে। এই ড্যান্ডি নেশা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে ড্যান্ডির অন্যতম উপকরণ সাইকেল টায়ার বা জুতা মেরামতে ব্যবহƒত আঠা বিক্রিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নির্দিষ্ট বয়সী ক্রেতা ছাড়া এই আঠা কারও কাছে বিক্রি করতে পারবে না দোকানিরা। কেউ বিক্রি করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সম্প্রতি এমন বার্তা মাঠপর্যায়ের পুলিশের কাছেও পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে পুরোদমে কাজও চলছে বলে জানিয়েছে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্র।
শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, রাজধানীতে বখে যাওয়া তরুণ-তরুণী ও পথশিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। এদের অনেকে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। অভিভাবক না থাকায় এসব শিশু মাদকেও জড়িয়ে পড়ছে। প্রথমে তারা সিগারেট, এরপর গাঁজা বা ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত হচ্ছে। বেশির ভাগই মাদকে জড়িয়ে পড়ছে বন্ধু ও খেলার সাথীদের মাধ্যমে। ফলে নেশায় জড়িয়ে তাদের জন্য সেই টাকা ম্যানেজ করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সে কারণে অনেকে রাস্তাঘাটে টোকাইয়ের কাজ ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িয়ে টাকা আয় করার চেষ্টা করছে। রাস্তাঘাটের পথচারী ও বাসযাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো তাদের মাধ্যমেই বেশি ঘটছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, রাজধানীসহ সারা দেশের পথশিশুর ৮৫ ভাগ মাদকে আসক্ত। এদের বেশির ভাগই সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে শুঁকে নেশা করে। আর এদের বয়স ৯ থেকে ১৮-এর মধ্যে। পলিথিন, প্লাস্টিক ছাড়াও নিজের পরিধেয় জামায় ড্যান্ডি গাম লাগিয়ে নেশা করে তারা। কিছুক্ষণ পর পর ঘ্রাণ নিয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুরা।
পুলিশ বলছে, গত কয়েক মাসে রাজধানীতে কয়েক শতাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এই ছিনতাইকারীদের৮৫ ভাগ একটি অংশ উঠতি যুবক। তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর শাহবাগ, মতিঝিল, মিরপুর গোল চত্বর ও কারওয়ানবাজার গোলচত্বর এলাকায় এই উঠতি যুবকদের দৌরাত্ম্য বেশি। তারা সুযোগ পেলেই বাস যাত্রীদের মোবাইল ছিনতাই করে থাকে। এরপর ভিড়ের মধ্যে দ্রুত হারিয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ড্যান্ডি নেশা করার জন্য অন্যতম উপকরণ হলো ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ নামক আঠালো বস্তু (গাম)। দোকানিরা বলছেন, এই আঠা ভারতে তৈরি হয়। পাওয়া যায় দুভাবে। দুই রকমের কৌটায়। প্রতিটির দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। এসব আঠা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যারের দোকানগুলোয় বিক্রি হয়ে থাকে। দাম বেশি হওয়ায় তারা এসব দোকান থেকে কেনে না। সাধারণ কোনো জুতা মেরামত বা ইলেক্ট্রনিক রিপেয়ারের দোকান থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকায় কিনে থাকে। ফলে খুব সহজেই এই আঠা দিয়ে তারা ড্যান্ডি নেশায় বুঁদ হতে পারে। তবে দোকানিদের দাবি, তারা এই আঠা শিশুদের কাছে বিক্রি না করলেও মুচিদের কাছে খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছে।
ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, এই আঠা অল্প টাকায় খুব সহজে পথশিশু ও নেশাকারীরা পেয়ে যাচ্ছে। ফলে নেশার পর তারা রাত জেগে ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে আঠা বিক্রিতে দোকানিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট বয়সী ব্যক্তি ছাড়া কারও কাছে এই আঠা বিক্রি করতে পারবে না। এ জন্য জুতা মেরামত (মুচি) থেকে শুরু করে হার্ডওয়্যারের দোকানিদের কাছে এ বার্তা পৌঁছাতে প্রতিটি থানাকে বলা হয়েছে।
কমলাপুর এলাকার নয়ন নামে ১৩ বছরের এক শিশুর সাথে কথা হলে সে জানায়, ‘পরথমে বন্ধুদের কাছ থেইকা লইয়া সিগারেট খাইছি। হের বাদে গাঁজা আর মদ খাওয়া ধরছি। খুব মজা লাগে খাইতে।’ নয়নের মতো শত শত নয়ন আছে গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, সিসা, ড্যান্ডি, ইয়াবা, পেথিড্রিন ইত্যাদি মাদকে আসক্ত। এসব মাদকদ্রব্য গ্রহণের কারণে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাইকোর্ট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্বর, পল্টন, মতিঝিল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল, ঢাকা মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশুরা বিভিন্ন ধরনের মাদক খাচ্ছে বা নিচ্ছে। এদের বেশির ভাগই পথশিশু। এসব এলাকায় সক্রিয় মাদক বিক্রেতারা।
এদিকে শুধু বস্তি বা পথশিশুই নয়, মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিশুরাও। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বনানী, গুলশান, ধানমণ্ডির বেশ কয়েকটি খাবারের দোকানের আড়ালে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সিসা গ্রহণ করে।
তবে বহু শিশু মাদকে আসক্ত হলেও সরকারি পর্যায়ে শিশুদের মাদকাসক্তি প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সরকারি নিরাময়কেন্দ্র আছে মাত্র চারটি। এগুলোতে শয্যাসংখ্যা ৫৫টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে মাদকাসক্ত শিশুদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রোটেকশন অব বাংলাদেশ (সিএসপিবি) নামে একটি প্রকল্প রয়েছে সরকারের। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের কিছু স্থানে ড্রপ ইন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মাদকাসক্ত শিশুদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়। আপনগাঁও, আহ্ছানিয়া মিশনসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা মাদকাসক্ত শিশুদের নিরাময় ও পুনর্বাসনে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়ে থাকে পুলিশ। তবে, যে সকল কারণে শিশুকে পথে নামতে হয় এবং যে সকল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে তারা মাদকের দিকে ঝুঁঁকে পড়ে তা দূর করতে না পারলে; এবং দেশের বাইরে থেকে মাদকের প্রবেশ রোধ করা না গেলে কেবলমাত্র পুলিশের একার পক্ষে এ সমস্যার সমাধান সহজ নয়। এছাড়া, পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের বিচারও নিশ্চিত করতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি