
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ অথবা ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। রোজা ২৯টি হলে ২ মে হবে ঈদ। আর রোজা ৩০টি পূর্ণ হলে ঈদুল ফিতর হবে ৩ মে। ঈদ এলেই মানুষ বাড়ি ফিরতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ির পানে ছুটেন লাখো মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান যে যেভাবে পারেন ছুটে যান গ্রামে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় গত দুই বছর মানুষ সেভাবে বাড়ি ফিরতে পারেননি। তবুও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে গেছেন। তবে সেই সংখ্যাটা ছিল অনেক কম।
তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা কমে যাওয়ায় উঠে গেছে সব বিধিনিষেধ। স্বাভাবিক হয়েছে সব কার্যক্রম। তাই দুই বছর পর এবারের ঈদে গ্রামে ফেরা মানুষের ঢল নামবে আগের সেই চিরচেনা রুপে। সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে নৌপথে মানুষে ঠাসা থাকবে। লাখো মানুষের বাড়ির ফেরার ঢলে দুর্ভোগ হতে পারে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ঈদের অনেক আগেই কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে আগামী শুক্রবার থেকে এই সংখ্যাটা বাড়বে বলে ধারণা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদের আগে আগামী ২৮ এপ্রিল চাকরিজীবীদের শেষ অফিস। এরপর থেকেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ি যাওয়ার হিড়িক পড়বে। তবে ঈদযাত্রাটা শুরু হবে তারও আগে থেকেই। ২২ এপ্রিল শুক্রবার থেকেই অনেকে বাড়ির পথ ধরবেন। ইতোমধ্যেই শহরে যাদের কোনো কাজ নেই পরিবারের এমন সদস্যদের অনেকে গ্রামে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই সংখ্যাটা ব্যাপকহারে নয়। তবে ২২ এপ্রিল থেকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২২ তারিখ থেকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে পারার একটি বড় কারণ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার রোজার মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়। অন্য বছর রোজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ফলে ১০ রমজানের মধ্যেই পরিবারের চাকরিজীবী সদস্যরা ছাড়া অন্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিতো অনেকে। প্রথম রোজা থেকে ধাপে ধাপে বাড়ি যেতে নগরে বসবাস করা চাকরিজীবীদের পরিবারগুলো। এবার সন্তানদের কারণে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ পরিবার গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেননি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের অপেক্ষায় আছেন তারা।
স্কুল-কলেজ পর্যায়ের বন্ধ শুরু হবে ২০ এপ্রিল বুধবার থেকে। একদিন পর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে প্রাথমিক পর্যায়ের ঈদের ছুটি। ফলে শুক্রবার থেকেই কর্মজীবীরা বাড়ি পাঠাতে পারবে তাদের পরিবারকে।
আগামী শুক্রবার (২২ এপ্রিল) থেকে বাড়ি যাওয়ার চাপ শুরু হবে বলে ধারণা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
মহাখালী থেকে বগুড়াগামী পরিবহন কাউন্টারের উপস্থিত টিকিট বিক্রি করা জুবায়ের বলেন, ‘এবার শুনছি এখনো স্কুল-কলেজ খোলা। অন্যান্যবার রোজায় প্রতিদিনই যে হারে মানুষ বাড়ি যেতো এবার এখনও সেরকম শুরু হয়নি। রোজাতো অর্ধেক শেষ। স্কুল বন্ধ হলে আগামী শুক্রবার থেকে একটা ভিড় হইবো দেখবেন।’
সোমবার (১৮ এপ্রিল) গাবতলী বাস টার্মিনালে টিকিটের খোঁজ নিতে আসেন ব্যাংকার আসহানুল আমিন। হানিফ পরিবহন এবং নাবিল পরিবহন ঘুরে খোঁজ নেন যাত্রার। কথা বলে জানা গেল, তার দুই ছেলের একজন সপ্তম এবং একজন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। যেহেতু বুধবার স্কুল ছুটি হবে তাই শুক্রবারই বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চান পরিবারের সদস্যদের।
ইতোমধ্যেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করেছেন জানিয়ে আহসানুল বলেন, ‘আগে পরিবারকে গ্রামে পাঠাই স্বস্তিতে থাকি। এরপর ছুটি হলে আমি বাড়ি যাব। একা মানুষ। কষ্ট করে হলেও বাড়ি যেতে পারবো। কিন্তু পরিবার নিয়ে ঈদের দুএকদিন আগে যাওয়া অনেক কষ্টকর।’
ডিপজল পরিবহন কাউন্টারের টিকিট মাস্টার খালেক মিয়া বলেন, অনেকেই আসছে অগ্রিম টিকিট নিতে। অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন টিকিট আছে নাকি শেষ। লম্বা ছুটি পাইতাছে মানুষ সেজন্য একটা চাপ পরব আগামী সপ্তাহেই। খাজা ট্রাভেলস সামনে কথা বলেন সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, একসঙ্গে সবার ছুটি। আবার মানুষ দুই বছর বাড়িও যায়নি সেইভাবে। এবার ভিড় বাড়বে এমন একটা আশঙ্কা আছে। সেজন্য আমার পরিবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি আগেই। এখন ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে সেও চলে যাবে। বেশি চাপ থাকলে আমি ঈদের দিন যাব। কারণে সেদিন সড়ক অনেকটা ফাঁকা থাকে।
এদিকে গত ১৫ এপ্রিল থেকে বাসের অগ্রিম টিকেট দেয়া শুরু হয়েছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় সবাই একেবারে শেষদিকে বাড়ি যেতে পারেন। ২০ রোজা থেকে একটা ভিড় বেশি হবে। ৩০ এপ্রিল ও ১ মে’র টিকিটের বেশি চাহিদাও বেশি বলে জানা গেছে।
বাসের মতো ট্রেনেও ঈদযাত্রার শুরুর আগেই মানুষ গ্রামে ফিরছেন। ২৭ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও তার অনেক আগে থেকে অনেকে বাড়ি ফিরছেন। দেরি করলে দুর্ভোগ হবে বিষয়টি মাথায় নিয়েই তারা আগেভাগে বাড়ি ফিরছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকট বিক্রি শুরু হবে। ওই দিন দেয়া হবে ২৭ এপ্রিল যাত্রার টিকিট। একইভাবে ২৪ এপ্রিল মিলবে ২৮ এপ্রিলের, ২৫ এপ্রিল মিলবে ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল মিলবে ৩০ এপ্রিলের এবং ২৭ এপ্রিল ১ মের টিকিট। লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকিট আগামী বুধবার (২০ এপ্রিল) থেকে বিক্রি করা হবে। সদরঘাটে অবস্থিত লঞ্চ কাউন্টার থেকে এসব টিকিট বিক্রি করা হবে। আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত লঞ্চের ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চলবে।
এদিকে অন্যান্যবারের মতো এবারও ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি নিয়েই রওয়ানা হতে হবে। রাজধানীর গাবতলী-নবীনগর-ধামরাই, এয়ারপোর্ট-আশুলিয়া-বাইপাইল, এয়ারপোর্ট-গাজীপুর মহাসড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও চলছে উন্নয়ন কাজ। এছাড়া সড়কের ফুটপাতসহ অনেক জায়গা দখল করে আছে হকার। অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশাসহ ছোট যান। এসব কারণে রাজধানী থেকে বের হওয়ার দূরপাল্লার গাড়ি বারবার থমকে যাচ্ছে।
এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী ঘরমুখো যাত্রীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পথেই উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, সড়কের অবস্থা অন্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা ভালো। তবুও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির শঙ্কা আছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী কলেজ গেট পর্যন্ত রাস্তায় থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে আশুলিয়া বাইপাইল পর্যন্ত গত কয়েক বছর ধরেই সড়কটির বেহাল অবস্থা।
যদিও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রা মোড়ে উত্তরবঙ্গগামী কোনো বাস, ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে দেওয়া হবে না। নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে যাত্রী ওঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন বলেছেন, ঈদে উত্তরবঙ্গগামী মানুষের যানজটের ভোগান্তি লাঘবে অতিরিক্ত ২০০ জন অফিসার ও ফোর্স চন্দ্রা মোড়ে কাজ করবে। ঈদযাত্রা সুন্দর ও নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাবে।
ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে নৌরুটেও। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুট। ফেরি সংকট দুর্ভোগ বাড়াতে পারে বলে এই রুটে চলাচলরতরা আশঙ্কা করছেন।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকট, ফেরি সংকটসহ নানা সংকট বিরাজ করছে ফলে শঙ্কাও বাড়ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি