
ফেনীতে আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলাটি পুনঃতদন্ত ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নুসরাতের গ্রামবাসী। শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা শহরের জিরো পয়েন্টে নুসরাতের গ্রাম চট্টগ্রাম সমাজের কয়েক হাজার বাসিন্দা ও স্থানীয় এলাকাবাসীর অংশ গ্রহনে এ কর্মসূচী পালিত হয়।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। নুসরাতের নিজ গ্রাম চট্টগ্রাম সমাজের উদ্যেগে ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সামছুল আরেফিন,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন,পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব,উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দিন মোহাম্মদ, উপজেলা যুবলীগের সহ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া,সোনাগাজী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ জাহান, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের ভাই নুর হোসেন, আফসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া আফসার ইফাত, জাবেদ হোসেনের বাবা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্যাহ,উম্মে সুলতানা পপির মা হোসনে আরা বেগম, মাকসুদ আলমের ছেলে মো. বিজয় ও শাহাদাত হোসেন শামিমের মা বিবি ফাতেমা ও তার প্রতিবেশী নিশাদ ভুঞা এবং মহিউদ্দিন শাকিলের মামি রুমি বেগম।
বক্তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ সঠিক তদন্ত না করে পিবিআই এর প্রধান বনজ কুমার মিথ্যা মামলায় নাটক সাজিয়ে ১৬ আসামিকে ফাঁসানোর দাবি করে তাঁরা বনজ কুমারের শাস্তির দাবী জানান। একই সাথে নুসরাত পরিবারকে নাটকবাজ পরিবার দাবী করে তার ভাই নোমান রায়হানকে শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
বক্তারা বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচার করতে বললেও পিবিআই স্থানীয় রাজনৈতিক বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের ঘটনাকে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমসহ ১৬ আসামিকে ফাঁসির আসামি বানিয়েছে। এছাড়া পিবিআইএর প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের ঘুষ বাণিজ্য, ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ ও নুসরাতের আত্মহত্যার করার হুমকি সম্বলিত এসএমএস গায়েব, গ্রেফতারকৃতদেরকে বৈদ্যুতিক শর্ট, ড্রিল মেশিন ব্যবহার এবং বিবস্ত্র করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অপরাধে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তারা আরো বলেন, আমাদের আন্দোলনের দাবীর প্রেক্ষিতে বনজ কুমার গত ১৪ নভেম্বর বেসরকারী টেলিভিশন চ্যালেল ২৪ মুখোমুখি অনুষ্ঠানে নিজেকে দায়মুক্ত রাখতে নতুন করে মিথ্যাচার করেন। তারা মুখোমুখি হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য বনজ কুমার কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহনকারী চট্টগ্রাম সমাজের বাসিন্দারা বলেন, নুসরাতের মৃত্যুর পর ঘটনাটি হত্যাকান্ড হিসেবে ধরে নিয়ে অভিযুক্তদের বিচারের দাবীতে আামরা সোনাগাজীতে ব্যাপক প্রতিবাদ করি। আমাদের প্রতিবাদের সুযোগের অপব্যবহার করে পিবিআই প্রধান নাটক সাজিয়ে নিরাপরাধদের ফাসিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ ও এসএমএস গায়েবের ঘটনা প্রকাশ হলে আমরা বুঝতে পারি পিবিআই নাটক বানিয়ে নুসরাতের আত্মহত্যাকে হত্যায় রুপান্তর করেছে। তাই গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে নুসরাতের মামলাটি পুন:তদন্ত করে নিরাপরাধদের মুক্তি ও বনজ কুমারের বিচারের ব্যবস্থা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি।
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞ জানায় নুসরাতের পরিবার। বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের আপীলের প্রেক্ষিতে মামলাটি হাইকোর্টে আপীল শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
২০১৯ সালে ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচজন। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি