
আগামী পহেলা বৈশাখ উৎসবে ফিরতে চায় বাঙালী। এক বছর বন্ধ থাকার পর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই মনে করছে, এবার সবকিছু যে নিয়মে চলছে একই নিয়মে হতে পারে বর্ষবরণ উৎসব।
বিশেষ করে মৌলবাদীরা যখন মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন আর ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। বাঙালীর চির উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা আরও জরুরী হয়ে পড়েছে। সরকারের ওপর মহলের চিন্তা এখনও পরিষ্কার না হলেও, সায় আছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। আজ রবিবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ বরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠকরা এতে যোগ দেবেন। বৈঠক থেকে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে সারাবছরই নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে সবচেয়ে বর্ণিল উৎসবটি হয় বাংলা নববর্ষে। আনন্দঘন দিনটির জন্য অনেক আগে থেকে প্রতিক্ষা করতে থাকে মানুষ। শুধু মুসলমান বা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান নয়, সব ধর্মের মানুষ সমান আগ্রহ নিয়ে উৎসবে যোগ দেয়। উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দেয় পহেলা বৈশাখ।
সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় গত বছর বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। প্রথমবারের মতো বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করে ছায়ানট। উদ্যোগী হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাও। ঘুম থেকে ভোরে ওঠে রমনা বটমূলে যাওয়া হয়নি রাজধানীর মানুষের। রমনাবটমূলে বসে গান গেয়ে আবাহন করা হয়নি নতুন বছরকে। আকর্ষণীয় মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেয়া হয়নি। ছোট বড় সব আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করে ঘরে ঢুকে পড়তে হয়েছিল সংগঠকদের। নতুন পোশাক কেনা হয়নি। আগের বছরের শাড়ি পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে বাসার ছাদে বারান্দায় অনেকে পায়চারী করে কাটিয়েছেন।
এবার পরিস্থিতি সে তুলনায় ভাল বলেই মনে করা হচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় যথেষ্ট সফল হয়েছে বাংলাদেশ। সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি শঙ্কা মুক্তি না ঘটলেও প্রায় সবকিছু সচল রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলাও। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলায় যাচ্ছে পাঠক। বই দেখছেন। সংগ্রহ করছেন। একই সময় প্যারেড গ্রাউন্ডে চলছে মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং শিল্পীরা যোগ দিচ্ছেন। চলছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
ইতিবাচক এ পরিবর্তনের মধ্যেই আসছে ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। চৈত্র শেষ হলেই বৈশাখ বরণের পালা। এ ক্ষেত্রে বরাবরই প্রথম নামটি ছায়ানট। সেই ষাটের দশকে পাকিস্তানীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু করেছিল। আজও সেই প্রতিবাদী চেতনায় বাঙালীকে পথ দেখিয়ে চলেছে।
জানা গেছে, অভিন্ন অবস্থান থেকে এবার বর্ষবরণ উৎসবে ফেরার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ছায়ানট। আরও বেশ কয়েকদিন আগে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জনকণ্ঠকে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সে প্রস্তুতি আরও গতি পেয়েছে।
শনিবার ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা জানান, রমনা বটমূলেই প্রভাতী অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে জায়গাটি চেয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল তার উত্তর সহসাই পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কেও অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয়া হতে পারে।
জানা গেছে, এসবের পাশাপশি ছায়ানটে চলছে রিহার্সালও। ধানম-ির শঙ্কর এলাকায় অবস্থিত ভবনের বড় বড় কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে রিহার্সাল। বর্তমান সময়টিকে আমলে নিয়ে তাদের জন্য গান নির্বাচন করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতিকৃৎ ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন। সে গানগুলো শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই চর্চা করছেন বলে জানিয়েছেন লিসা।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছর এক শ’ থেকে দেড় শ’ শিল্পী নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করেছি আমরা। এবার তা অনেক কমিয়ে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাকে উৎসর্গ করে ছায়ানটে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি আমরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চমৎকার অনুষ্ঠান হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজনে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, আমরা আমাদের মতো করে প্রস্তুতি সেরে রাখছি। প্রয়োজনে লোক সমাগম কমিয়ে বা দর্শকশূন্য মঞ্চে অনুষ্ঠান করব আমরা। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আটকে রাখেন লোক। সেটা আপনাদের দায়িত্ব। আমাদের অনুষ্ঠান করতে দিন।
মৌলবাদীদের আস্ফালন ও বাড়াবাড়ির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সব অর্জন ওরা নষ্ট করে দিতে ওঠে পড়ে লেগেছে। অন্য ধর্মের লোকদের বাড়ি ঘরে হামলা চালাচ্ছে। ভাস্কর্যে হাত দিচ্ছে। এ অবস্থায় সেই ষাটের দশকের মতোই প্রতিকূলতা ঠেলে উৎসবে যোগ দেয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনও বন্ধ। হলগুলো ফাঁকা। চারুকলা অনুষদের যে শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তারা ক্যাম্পাসে নেই। এ অবস্থায় সীমিত পরিসরে হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন।
শনিবার তিনি বলেন, সবই তো মোটামুটি চলছে। বইমেলাও হচ্ছে দিব্যি। মঙ্গল শোভাযাত্রাও আয়োজন করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, মনে রাখতে হবে, ইউনেস্কো ঘোষিত ইনটেনজিবল কালচারাল হ্যারিটেজ। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের এটি কন্টিনিউ করার ব্যাপার আছে। ঐতিহ্যটি বাঁচিয়ে রাখতে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি তা ওদের জানাতে হবে। সে কারণেও মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে হবে। তিনি বলেন, এ কাজে শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষক নিয়োজিত থাকেন। বরেণ্য শিল্পীরা ছবি আঁকেন। সেগুলো বিক্রি করে যে টাকা আসে তা দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এবার বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ। পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আগের মতো করে কিছু আয়োজন করা সম্ভব হবে না। একটু ছোট পরিসরে করতে হবে। তবে করব। বর্তমানে এ দাবিটি জোরালো হচ্ছে। অনেকেই জানতে চাইছেন এবারের আয়োজন সম্পর্কে। উগ্রবাদী হামলা ষড়যন্ত্রের বিপরীতে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালীর উদারনৈতিক ভাবাদর্শ জোরালোভাবে প্রচার করতে চান বলে জানান তিনি।
এদিকে, সময় ঘনিয়ে আসায় পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে আজ রবিবার বৈঠক ডেকেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বৈঠকে ছায়ানট, চারুকলা অনুষদ ও সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাদের মতামত রাখবেন। তাদের মতামত প্রস্তাবাকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তিনি বলেন, আমরা তো সব সময়ই খুব গুরুত্ব দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করে থাকি। গতবার করোনার কারণে পারলাম না। এবার কিছু করতে হবে। প্রতি বছর যেভাবে লোক সমাগম ঘটিয়ে ছায়ানট বা চারুকলা বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করে সেভাবে বোধহয় পারব না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আয়োজনের কথা আমরা আমাদের দিক থেকে ভাবছি। তবে আগামীকালের (আজ রবিবার) এ সংক্রান্ত মিটিংয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হবে। সেই কথার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতোই বাকি কাজ এগোবে বলে জানান তিনি। – জনকণ্ঠ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি