
তপ্ত দুপুরে রাজধানীর সচিবালয়ের সামনের সড়কে তীব্র যানজট। অনেকে রিকশা-গাড়ি থেকে মেনে পায়ে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যে। হঠাৎ খাদ্যভবনের সামনের ফুটপাতে গাছের ছায়ায় চোখে পড়ে সাত থেকে আট বছর বয়সী শিশুসহ দুটি বস্তা নিয়ে বসে আছেন ষাটোর্ধো একজন নারী। খানিকটা দূরে ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় চাল ও আটা বিক্রির ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন। বাজারে সবধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই ভিড়।
এদিকে প্রখর রোদের কারণে লাইনে দাঁড়ানো নারী-পুরুষ কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে, কেউ চাল কেনার জন্য সঙ্গে আনা ব্যাগ-বস্তা দিয়ে রোদ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। কথা বলে জানা যায়, লাইনে দাঁড়ানো সবাই কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। এদের অনেকে আশপাশের সরকারি অফিসের কর্মচারী। কেউ আবার এসেছেন অন্য এলাকা থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাল-আটা মিলবে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন কেউই। তাই সবার চোখে-মুখে দেখা যায় অজানা শঙ্কা। কারণ কম মূল্যে চাল-আটা না কেনা গেলে কষ্ট বিফলে যাবে।
তবে এমন অপেক্ষার পরও কিছু সময় পরপর ৩০ টাকা কেজি চাল এবং ২৭ টাকা কেজি দরে যারা আটা কিনতে পারছেন তাদের চোখে-মুখে দেখা যায় তৃপ্তির ছাপ। এদেরই একজন ফুটপাতের সেই নারী, যার নাম সফুরা খাতুন। পুরানা পল্টন থেকে দুই তিন দিন পরপর যিনি এই ট্রাক থেকে খোলাবাজারে চাল-আটা সংগ্রহ করেন। বিস্তারিত কথা হয় সফুরা খাতুনের সঙ্গে। জানালেন সঙ্গে থাকা মেয়েটি তার নাতনি। সেগুনবাগিচায় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ‘জুম স্কুলে’ পড়ে। একা আসতে ভয় লাগে, তাই সঙ্গে নাতনিকে নিয়ে আসেন। শুরুর দিকে এত সময় অপেক্ষা করতে না হলেও দিনে দিনে মানুষ বাড়ছে। তাই অপেক্ষা করতে হয় বেশি সময় ধরে।
সোমবার (৬মার্চ) যখন তার সঙ্গে কথা হয় তখন সময় দুপুর ১টা ১০ মিনিট। জানান, সকাল নয়টার দিকে এসেছেন। ট্রাক এসে প্রস্তুত করে বিক্রি শুরুর তিন ঘণ্টারও কিছু সময় পর পেয়েছেন চাল ও আটা। গণমাধ্যমকে এই বৃদ্ধা বলেন, ‘নয়টায় আইসা আজানের (জোহরের আজান) সময় চাউল পাইছি। এত গরমে বেশি সময় দাঁড়াইয়া থাকতে পারি না।’ অন্যদিন ১৫০ টাকায় পাঁচ কেজি চাল আর ১১০ টাকায় চার কেজি আটা দিলেও আজ তাকে ছয় কেজি আটা দেওয়া হয়েছে। সেজন্য অবশ্য আরও ৫৫ টাকা বাড়তি লেগেছে। এদিকে কয়েকজন অভিযোগ করেন, আশপাশের সরকারি অফিসের লোকজন লাইন ভেঙে পণ্য নিয়ে যায়। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাকে পণ্য বিক্রির দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এমন অবস্থায় সফুরা খাতুনের মতো আরও যারা খোলা বাজারে ট্রাক থেকে চাল-ডাল কিনছেন তাদের দিনের বড় অংশ চাল কিনতে চলে যাচ্ছে। খিলগাঁও থেকে আসা ফারুক হোসেন জানালেন, আত্মীয়ের মাধ্যমে জেনেছেন খাদ্য ভবনের সামনে প্রতিদিন এলেই চাল পাওয়া যায়। কিন্তু সোমবার এসে দেখেন লম্বা লাইন।
পেশায় রিকশা চালক ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রিকশা বন্ধ রাইখা দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়াইয়া আছি। চাল নিতে পারলে আবার খিলগাঁও যাবো। যে অবস্থা দেখতেছি পাওয়া যাইবো কি না তা বলতে পারি না। না কিনতে পারলে ভাড়ার টাকাও লস।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবন বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে চলছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলে স্বর্ণের দোকানে কাজ করে ১০ হাজার টাকা পায়। আমি মাসে ২০ দিনের মতো রিকশা চালাই। তাতেও ১০ হাজারের মতো আয় করি। মেয়ে বিয়ে দিলেও এখনো আমাদের বাসায় আছে। কিন্তু খরচ তো বাড়তেছে দিন দিন।’ এই আয়ে কেমন করে কাটছে দিনকাল- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হোসেন বলেন, ‘এই অবস্থায় আসলে জীবনটা চলে না। তারপরও আল্লাহই চালাইতেছে ।’ ওএমএসের ট্রাকে পণ্য বিক্রির দায়িত্বে থাকা সাঈদ বিন কাওসার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিদিন সাড়ে তিনশ মানুষের জন্য বরাদ্দ থাকে। বন্ধ ছাড়া প্রতিদিন বিক্রি হয়। যত সময় মাল থাকে আমরা বিক্রি করে দিই। লোকজন বেশি হওয়ায় সময় বেশি লাগছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি