দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে‌ : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৮, ২০২২, ৬:৩২ অপরাহ্ণ

দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে‌ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। গত সোমবার (১৬ মে) বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে। মির্জা ফখরুল বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত ৮ মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরও চার বিলিয়ন ডলার কমে যাবে।

এভাবে যদি রফতানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায়, তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, রিজার্ভ শেষের কি ভয়াবহ পরিণতি শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রফতানি সে হারে বাড়েনি।
প্রবাসী আয়ও কমে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এতে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ বছরই আমদানি প্রায় ৮২-৮৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে। কিন্তু রফতানি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই ৩২-৩৫ বিলিয়ন ডলারের যে বাণিজ্য ঘাটতি, সেটা রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে না। কাজেই এ বছরই ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট’ বিপদের মুখে পড়বে।

এদিকে টাকার মান ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ছাড়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৭-৮ টাকা কমে গেছে। ভবিষ্যতে টাকার মান আরও কমতে থাকবে। পত্রিকায় দেখলাম কার্ব মার্কেট প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ সংগতিপূর্ণ নয়।

শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, একই সঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। টিসিবির তথ্যে দেখা যায়, এক বছরে পাম অয়েলের দাম ৬১ শতাংশ বেড়েছে। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৫৬ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ৪৭ শতাংশ, অ্যাঙ্কর ৩১ শতাংশ এবং ডিমের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ। টিসিবির এই তথ্যই বলে দেয় সরকার ঘোষিত মূল্যস্ফীতির এ তথ্য সংগতিপূর্ণ নয়।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, অর্থনীতিবিদদের মতে- বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপজ্জনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিতেও সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর রয়েছে সরকার দলীয় সিন্ডিকেটের তাণ্ডব।

ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম ও সয়াবিন ওয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে এত দাম বাড়েনি। ভরা মৌসুমে চালের দাম যেখানে সবসময় স্বাভাবিক নিয়মে কমে যায়, গত কয়েকদিনে তা অনেক বেড়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল জানান, গত মার্চে রফতানি আয় হয় ৪৭৬ কোটি ডলার। আর প্রবাসী আয় আসে মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার। রফতানি ও প্রবাসী আয় মিলিয়ে মার্চে ৬৬২ কোটি ডলারের আয়ের বিপরীতে আমদানি ব্যয় শোধ করতে হয় ৭১৪ কোটি ডলার। তাতে ঘাটতি দাঁড়ায় ৫২ কোটি ডলার।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার ৫২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এতে রিজার্ভ কমে হয়েছে চার হাজার ২০০ কোটি ডলার। আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল এসব আমদানির সুযোগ নিয়ে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থপাচার হচ্ছে বলেও অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার চাপ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি। এখন রিজার্ভ রয়েছে চার হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

বিরোধী দলীয় এই নেতা বলেন, আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তাই, বাস্তবিকভাবে আইএমএফ প্রণীত নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারেই অ্যালার্মিং।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।

ঢাকা অফিস

সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু

নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬

+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২

shwapnonews@gmail.com

পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি

© ২০১৯ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সপ্ন নিউজ
Powered By U6HOST