সর্বশেষ :
করোনায় দেশে আত্মহত্যার নতুন রেকর্ড

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারিতেও দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর যে হারে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, করোনাকালীন সময়ে তা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আজ শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আত্মহত্যার ওপর প্রকাশিত একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, গতবছর করোনাকালীন সময় দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জনের। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কিছুটা বেশি। সেই তুলনায় এক বছরে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৪৩৬টি। হিসাবের অংকে যা ৪০ শতাংশ বেশি।
সংগঠনটি জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে আত্মহত্যার চিত্র কেমন তা জানতেই জরিপটি করা হয়। জরিপটি করতে, দেশের দৈনিক গণমাধ্যম ও হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সংগঠনটি ৩২২টি আত্মহত্যার বিষয়ে বিশ্লেষণ করে আত্মহত্যাকারীদের বয়স, লিঙ্গ ও আত্মহত্যার কারণ ফুটিয়ে তুলেছে। জরিপটি গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, দেশে মোট আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ পুরুষ, বাকি ৪৩ শতাংশ নারী। ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন। যেসব কারণে আত্মহত্যা করেছে, সেগুলোর মধ্যে আর্থিক, পড়াশোনা, পারিবারিক সম্পর্কজনিত জটিলতা, হতাশা ও বিষণ্ণতা অন্যতম।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই করোনাকালে লিঙ্গ, শ্রেণির ভিন্নতায় আলাদা আলাদা রকমের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। কারো চাকরি নেই, কেউ স্বামী-সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত, কেউ ব্যবসায়িক কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, কেউ আবার নিজের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন যে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ দেখা দিচ্ছে। আর সে অবসাদই ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমি একজন তরুণ হিসেবে শঙ্কিত। যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না সচেতনতা। যে কারো আত্মহত্যা করার পিছনে আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশেরও দায় রয়েছে। একটা মানুষ কেনো আত্মহত্যা করে, তা নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই দেশের নীতিনির্ধারকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার দায়িত্ব তরুণদেরই। আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আত্মহত্যার কারণগুলো আমাদের কাছে যত তুচ্ছই হোক না কেনো, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কাছে তা অনেক বড় একটি ব্যাপার। তাই মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেক নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রসহ প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে আমাদের জোর দাবি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি পরিবার কিভাবে আত্মহত্যা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে রূপরেখা দাঁড় করানো দরকার। সবাইকে সচেতন না করতে পারলে ফলাফল অধরাই থেকে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনায় আত্মহত্যা বৃদ্ধির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। করোনাকালীন সময়টি অনেকটা দুর্যোগের মতো। দুর্যোগ মানুষকে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যায়। বিশেষ করে, যারা আক্রান্ত হয়েছে এবং আক্রান্ত হবে এ ভয়ে যারা থাকে, তাদের মধ্যে অনেক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আর এটা যদি মাত্রাতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ দেখা দেয়। যারা বিষণ্ণতায় এবং ডিপ্রেশনে থাকে, আত্মহত্যার প্রবণতাটা তাদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়।
তিনি বলেন, আত্মহত্যা বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিক অবস্থাও একটি কারণ। করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমে এসছে। অনেকে নিজের ব্যবসা হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন। এ কারণে বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। সবমিলিয়ে একজন ব্যক্তির ওপর যখন আর্থিক-মানসিক তীব্র চাপ তৈরি হয়, তখনই সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সংগঠনের পক্ষ কিছু সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো হলো-
১. মানসিক রোগ সম্পর্কে সচতেনতা বাড়ানো।
২. আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে সাবধানে রাখা। হাতের কাছে ছুঁড়ি, কাঁচি, ওষুধ না রাখা।
৩. আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা।
৪. আত্মহত্যার সতর্ক সংকেত সম্পর্কে জানা। (যেমন- সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আত্মহত্যার কথা বলা বা হুমকি, একবার বা বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা, বিষণ্ণতা রোগে ভোগা, সবার কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা ইত্যাদি।)
৫. গণমাধ্যমে দায়িত্বপূর্ণ প্রতিবেদন লেখা ও প্রকাশ করা। যথাসম্ভব আত্মহত্যার বিস্তারিত বিবরণ ও ধরণ বর্ণনা থেকে বিরত থাকা।
৬. ক্রাইসিস সেন্টার ও টেলিফোন হটলাইন সারাদেশে চালু করা।
৭. আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসা।
৮. আত্মহত্যায় ব্যবহৃত জিনিস সহজলভ্য না করা।
৯. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ নিশ্চিত করা।
১০. আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের সরকারি উদ্যোগে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা।
আপনার মতামত লিখুন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঢাকা অফিস
সম্পাদক : মোঃ ইয়াসিন টিপু
নাহার প্লাজা , ঢাকা-১২১৬
+৮৮ ০১৮১৩১৯৮৮৮২ , +৮৮ ০১৬১৩১৯৮৮৮২
shwapnonews@gmail.com
পরিচালনা সম্পাদক : মিহিরমিজি
© ২০১৯ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সপ্ন নিউজ
Powered By U6HOST