
‘অজু’ আরবি শব্দ। এর অর্থ পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও স্বচ্ছ। অজু দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি মাধ্যম। নামাজের আগে অজু করা বাধ্যতামূলক। অজুর শুরু ও শেষে দোয়ার শিক্ষা রয়েছে হাদিসে।
অজুর শুরুতে দোয়া
অজুর শুরুতে بِسْمِ ٱللَّٰهِ ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ আমল। একাধিক হাদিসে এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আনাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নামে অজু শুরু করো।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৪৪)
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নির্ভরযোগ্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘ওই ব্যক্তির নামাজ হবে না, যার অজু নেই। আর যে ব্যক্তি অজুর শুরুতে আল্লাহর নাম পাঠ করবে না, তার অজু হবে না (অর্থাৎ অজুর সওয়াব পাবে না)’ (মুসতাদরাক হাকেম: ৫৩৪; তিরমিজি: ২৫)। হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দ্বারা শুরু করা হয়নি, তা অসম্পূর্ণ। (জামে সগির, সুয়ুতি: ৬২৮৪)। সুতরাং অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা একটি সুন্নাহসমর্থিত ফজিলতপূর্ণ আমল।
এছাড়াও অজুর সময় আরেকটি দোয়া পড়া যায়। সেটি হলো— উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহিল আজিমি ওয়াল হামদু লিল্লাহি আলাল ইসলাম’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে ইসলামের ওপর রেখেছেন।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) অজুর শুরুতে এই দোয়া পড়তে বলেছেন। তবে কেউ কেউ শুধু ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ পাঠ করা যথেষ্ট বলেছেন। (আল-ফিকহুল ইসলামি ওয়া আদিল্লাহু: ১/২৪২)
অজুর শেষে দোয়া
অজু শেষ করে প্রিয়নবী (স.) একটি দোয়া পড়তেন। এর সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি। দোয়াটি হলো—أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلاّ اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللّهُمّ اجْعَلْنِي مِنَ التّوّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন।’ অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।’
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পর উল্লেখিত দোয়া পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামতো যেকোনো দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে। (তিরমিজি: ৫৫; মুসলিম: ৩৪৫)
উল্লেখ্য, দোয়ার শুরুতে কালেমা শাহাদাত অংশটি পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। এ সম্পর্কিত বর্ণনা মুনকার বা জঈফ। (শায়খ আলবানি, ইরোয়াউল গালীল: ১/১৩৫)। অজুর শেষে সুরাতুল কদর পড়ারও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। (আল মাকাসিদুল হাসানাহ লিস-সাখাওয়ি: পৃ.৪২৪)।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অজুর দোয়া নিয়মিত পড়ার তাওফিক দান করুন। অজু-নামাজসহ ইসলামের সকল বিধি-বিধান যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।